1:21 AM
সহস্রাব্দের উন্নয়ন ধুমধাম ধামাকা
mazhar's net
আজ বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী নিবিড়ভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গেও এমনভাবে যুক্ত, যা আগে কোনো দিন ছিল না। কিন্তু সার্বভৌম ও স্বাধীন সত্তায় পৃথিবী কোনো দিন এত বিভক্ত ছিল না। সাম্রাজ্যের যুগে তো নয়ই। আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে যেসব রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, তাদের বহু রাষ্ট্র কোনো না কোনো সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেকালের ওই সব রাষ্ট্রের যে অবস্থা ছিল, তার চেয়ে অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রশ্নটি এখন নানা দেশে অমীমাংসিত। দেশে-বিদেশে ও প্রতিবেশী দেশে দৃষ্টান্তের ও আশঙ্কার অভাব নেই।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ আজ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ভোগ করছে। অপরদিকে আর এক বিলিয়ন মানুষ নিঃসহায়, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেউ কারও দায়িত্ব নিতে চায় না। আমরা কি কেবল নৈতিক দায়বশত এ অবস্থার পরিবর্তন চাইব? এ অবস্থায় পৃথিবীর সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করা কতখানি সম্ভব? বর্তমান বিশ্বের কূটনীতিকদের সম্মুখে বড় প্রশ্ন, বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাস, আন্তর্জাতিক অপরাধ, বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও মানবিক সমস্যা। সমস্যাগুলো বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশে। সমস্যার কারণ বহুলাংশে উন্নত দেশগুলোর অমানবিক শোষণ। ভাগ্যোন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশের অপারগতা এবং কোনো কোনো দেশে ভাগ্য পরিবর্তনে অনীহা বা অনিচ্ছা। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অক্ষমতার প্রকাশ পায় সাধারণত তিনভাবে। নিরাপত্তা বিধানে, নাগরিকদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতে ও রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনে ব্যর্থতার কারণে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। পৃথিবীর বেশ কিছু রাষ্ট্র তিনটি বিষয়ে কৃতকার্যতা অর্জন করেনি। সেই নিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রশ্ন উঠেছে। যেকোনো একটি প্রসঙ্গে প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের অপারগতা রয়েছে। প্রায় ৩১টি দেশে সশস্ত্র সংঘাত বিরাজমান। আবার বেশ কিছু রাষ্ট্রের পতাকা দুর্বৃত্তদের হাতে।
অনেক রাষ্ট্রে নাগরিকদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য নেই। এই অক্ষমতার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের সঙ্গে অনিরাপত্তা, সংঘাত ও অধিকতর দারিদ্র্যের প্রশ্ন জড়িত। কিছু কিছু দেশকে গৌরবেও উন্নয়নশীল দেশ বলা যাচ্ছে না। তারা প্রায় পতনোন্মুখ রাষ্ট্র। এই করুণ অবস্থা নিরসনের উপায় কী? দারিদ্র্য জাদুঘরে পাঠানোর কথা শ্রুতিমধুর। কেউ বিশ্বাস করে না। বিবেকের দংশনে এবং মানবমর্যাদার প্রতি বাঁ-হাতি আনুগত্য প্রকাশের জন্যই হোক, গত কয়েক শতাব্দীতে নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। আগে এই অমানবেতর অবস্থাকে বিধির বিধান বলে মেনে মানুষ তার অবস্থা মেনে নিয়েছে, বা মানতে বাধ্য হয়েছে বা তার পরিবর্তন করতে চেয়েছে বা পরিবর্তন সাধন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাহায্য করার প্রশ্ন উঠলে সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতার ওপর প্রশ্ন ওঠে। সাহায্য নেওয়ার জন্য যে খরচাপাতি, সুদ ইত্যাদি দিতে হবে, তা পরিশোধ করার যোগ্যতা নিরূপণ করবে, যারা সাহায্যের ব্যবসায় নিয়োজিত। ঘরের ধান খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে কেউ রাজি নয়। মোষ তাড়াতে গিয়ে বাণিজ্যের দ্বার খুলে যায়, ভিন্ন কথা।
২০০০ সালের ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর সহস্রাব্দের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতিসংঘ। ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ১০০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, ৪৭ জন সরকারপ্রধান, পাঁচজন উপরাষ্ট্রপতি এবং তিনজন উপপ্রধানমন্ত্রী। তৎকালীন জাতিসংঘের ১৯২ সদস্যের আট হাজার প্রতিনিধি এবং সাড়ে পাঁচ হাজার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসের বিশ্বনেতাদের সে এক বৃহত্তম সমাবেশ। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেরও একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ তখন নিরাপত্তা পরিষদের এক নির্বাচিত সদস্য। সহস্রাব্দের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদে বাংলা ভাষায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। মধ্যবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে ২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেপ্টেম্বর ২০১০ সালের শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা অংশ নেন এবং শিশুমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ হ্রাসের সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত ও অভিনন্দিত হন। উন্নয়নশীল আরও পাঁচটি দেশ পুরস্কৃত হয়।
২০১৫ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য রেখে আটটি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে মানবজাতিকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তিদান, সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা, পুরুষ ও নারীর মধ্যে জীবিকা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, এইডস, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ দূরীকরণ, মাতৃত্বজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু দূরীকরণ, সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখে উন্নতীকরণ ও ধনী-দরিদ্র এবং বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারির নতুন সমীকরণ গড়ে তোলা।
১৯৯০ সালে নবজাতক এক হাজার শিশুর মধ্যে ১৪৯ জন মারা যেত, এখন তা কমে এসে ৫৪-তে দাঁড়িয়েছে। সহস্রাব্দ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্বকালে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের মধ্যে সব লক্ষ্যমাত্রাই অর্জন করতে পারবে বলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেছেন ও বলেছেন যে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে বার্ষিক ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্য। অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে পেরেছে। সবার জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৯০ সালে যেখানে শতকরা ৬১ ভাগ শিশু স্কুলে যেত, তা ৯২ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। দারিদ্র্যের হার শতকরা ৬০ থেকে ৩৭ ভাগে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে শতকরা ১০০ ভাগ শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান নিশ্চিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে। ২০১৫ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হবে ও চাকরির ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগ নারীর প্রতিনিধিত্ব সিট সংরক্ষণ করা হবে। তিনি আরও ঘোষণা দিয়েছেন, শিশু ও মায়ের মৃত্যুর হার কমানো হবে, সব নাগরিককে পানি ও উন্নত জীবনের সব ব্যবস্থা দেওয়া হবে। ধনী দেশগুলোর ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে তাদের জাতীয় সার্বিক আয়ের শতকরা ০.৭ ভাগ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ—নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ—এই প্রতিশ্রুত সাহায্য দিয়েছে। বাকি শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাহায্যের পরিমাণ ও হার ছিল নগণ্য। যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় আয়ের মাত্র ০.২ ভাগ হারে সাহায্য দিয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীও উদ্যাপিত হবে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি যে গতিতে উন্নয়ন অর্জন করে চলেছে, তাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত করা অসম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের উদীয়মান ৩০টি শিল্পোন্নত দেশের একটি হিসেবে আবির্ভূত হবে। বাংলাদেশকে এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করতে এবং অর্থনৈতিক অর্জন ধরে রাখতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো ২০১১-১৫ অনুসারে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। শিল্পনীতি ২০১০-এ ২০১৩ সালে আট শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জন করবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
আমরা যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত হার অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতের ওপর জোর দিতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে মোট ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে তিন লাখ ছয় হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে মোট ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলে বিনিয়োগের ঘাটতি পড়বে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত ১০ বছরের মতো বিনিয়োগ-গতি ধরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। আগামী পাঁচ বছরে নির্ধারিত মাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে প্রতিবছর গড়ে ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ হারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগের হার এখন মোট জিডিপির মাত্র ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সরকার-নির্ধারিত আগামী পাঁচ বছরে বিনিয়োগের হার ৩২ শতাংশে উন্নয়নের লক্ষ্যে জিডিপির মোট পরিমাণ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, তার বেশির ভাগই আসবে বেসরকারি খাত থেকে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও তা হয়েছে মূলত অনুৎপাদনশীল খাতে। বিনিয়োগ যদি অনুৎপাদনশীল খাতে হয়, সেটা সরকারি বা বেসরকারি যে সেক্টরেই হোক, তা দেশের অর্থনীতির জন্য তেমন মঙ্গল বয়ে আনবে না।
১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের দেশের রপ্তানি ছিল ৩৫ কোটি ডলারেরও নিচে। আজ গত চার দশকে তা ৩০ গুণ বেড়েছে। জাতীয় আয় বেড়েছে, তাই মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। আবার একই সঙ্গে বেড়েছে বৈষম্য। দেশের ওপরের দিকের মাত্র পাঁচ শতাংশ ধনী জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ ভোগ করে। সবচেয়ে গরিব পাঁচ শতাংশ মানুষ জাতীয় আয়ের মাত্র ০.৬৭ শতাংশ ভোগ করে। দৈনিক দুই ডলার আয় করা মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ। আর দৈনিক এক ডলারের নিচে আয় করে অর্ধেক জনসমষ্টি। মাথাপিছু আয়, মোট জাতীয় আয় ইত্যাদি সংখ্যাতত্ত্ব বৈষম্যপূর্ণ সমাজের আসল খবর দেবে না। উন্নয়নের ১ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলকরণ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সাধারণ ক্ষুধার নিবৃত্তি না ঘটলে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং নিরাময়যোগ্য রোগব্যাধির হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাবে না।
বাম চিন্তাবিদেরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও মাতৃস্বাস্থ্য আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বব্যবস্থাকে একটি মানবিক চেহারা এবং অসহনীয় দারিদ্র্যকে একটা সহনীয় রূপ দেওয়ার জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়নের নামে দয়ার্দ্র উপচিকীর্ষার কথা বলেছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর বহ্বাড়ম্বর লঘুক্রিয়ায় পর্যবসিত হবে। সহস্রাব্দের উন্নয়নের ধুমধাম ধামাকা চিঁ-চিঁ রবে অবশিত হবে।
মহাজনদের পরিকল্পনায় মহাজন-রাষ্ট্ররা সাহায্যের হাত তেমন না বাড়ালেও উন্নয়নশীল দেশের লোকে আশায়-আশায় স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই আশার চিত্র পরস্ফুিট করতে শিল্পী সন্তু সাহা যে ১০টি পোস্টার নির্মাণ করেছেন, আমি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে তা উদ্বোধন করি। ঢাকার জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও হোপ মাল্টিমিডিয়ার সম্মিলিত উদ্যোগে ওই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা। সাবেক প্রধান বিচারপতি।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ আজ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ভোগ করছে। অপরদিকে আর এক বিলিয়ন মানুষ নিঃসহায়, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেউ কারও দায়িত্ব নিতে চায় না। আমরা কি কেবল নৈতিক দায়বশত এ অবস্থার পরিবর্তন চাইব? এ অবস্থায় পৃথিবীর সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করা কতখানি সম্ভব? বর্তমান বিশ্বের কূটনীতিকদের সম্মুখে বড় প্রশ্ন, বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাস, আন্তর্জাতিক অপরাধ, বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও মানবিক সমস্যা। সমস্যাগুলো বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশে। সমস্যার কারণ বহুলাংশে উন্নত দেশগুলোর অমানবিক শোষণ। ভাগ্যোন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশের অপারগতা এবং কোনো কোনো দেশে ভাগ্য পরিবর্তনে অনীহা বা অনিচ্ছা। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অক্ষমতার প্রকাশ পায় সাধারণত তিনভাবে। নিরাপত্তা বিধানে, নাগরিকদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতে ও রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনে ব্যর্থতার কারণে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। পৃথিবীর বেশ কিছু রাষ্ট্র তিনটি বিষয়ে কৃতকার্যতা অর্জন করেনি। সেই নিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রশ্ন উঠেছে। যেকোনো একটি প্রসঙ্গে প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের অপারগতা রয়েছে। প্রায় ৩১টি দেশে সশস্ত্র সংঘাত বিরাজমান। আবার বেশ কিছু রাষ্ট্রের পতাকা দুর্বৃত্তদের হাতে।
অনেক রাষ্ট্রে নাগরিকদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য নেই। এই অক্ষমতার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের সঙ্গে অনিরাপত্তা, সংঘাত ও অধিকতর দারিদ্র্যের প্রশ্ন জড়িত। কিছু কিছু দেশকে গৌরবেও উন্নয়নশীল দেশ বলা যাচ্ছে না। তারা প্রায় পতনোন্মুখ রাষ্ট্র। এই করুণ অবস্থা নিরসনের উপায় কী? দারিদ্র্য জাদুঘরে পাঠানোর কথা শ্রুতিমধুর। কেউ বিশ্বাস করে না। বিবেকের দংশনে এবং মানবমর্যাদার প্রতি বাঁ-হাতি আনুগত্য প্রকাশের জন্যই হোক, গত কয়েক শতাব্দীতে নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। আগে এই অমানবেতর অবস্থাকে বিধির বিধান বলে মেনে মানুষ তার অবস্থা মেনে নিয়েছে, বা মানতে বাধ্য হয়েছে বা তার পরিবর্তন করতে চেয়েছে বা পরিবর্তন সাধন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাহায্য করার প্রশ্ন উঠলে সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতার ওপর প্রশ্ন ওঠে। সাহায্য নেওয়ার জন্য যে খরচাপাতি, সুদ ইত্যাদি দিতে হবে, তা পরিশোধ করার যোগ্যতা নিরূপণ করবে, যারা সাহায্যের ব্যবসায় নিয়োজিত। ঘরের ধান খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে কেউ রাজি নয়। মোষ তাড়াতে গিয়ে বাণিজ্যের দ্বার খুলে যায়, ভিন্ন কথা।
২০০০ সালের ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর সহস্রাব্দের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতিসংঘ। ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ১০০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, ৪৭ জন সরকারপ্রধান, পাঁচজন উপরাষ্ট্রপতি এবং তিনজন উপপ্রধানমন্ত্রী। তৎকালীন জাতিসংঘের ১৯২ সদস্যের আট হাজার প্রতিনিধি এবং সাড়ে পাঁচ হাজার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসের বিশ্বনেতাদের সে এক বৃহত্তম সমাবেশ। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেরও একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ তখন নিরাপত্তা পরিষদের এক নির্বাচিত সদস্য। সহস্রাব্দের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদে বাংলা ভাষায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। মধ্যবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে ২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেপ্টেম্বর ২০১০ সালের শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা অংশ নেন এবং শিশুমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ হ্রাসের সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত ও অভিনন্দিত হন। উন্নয়নশীল আরও পাঁচটি দেশ পুরস্কৃত হয়।
২০১৫ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য রেখে আটটি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে মানবজাতিকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তিদান, সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা, পুরুষ ও নারীর মধ্যে জীবিকা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, এইডস, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ দূরীকরণ, মাতৃত্বজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু দূরীকরণ, সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখে উন্নতীকরণ ও ধনী-দরিদ্র এবং বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারির নতুন সমীকরণ গড়ে তোলা।
১৯৯০ সালে নবজাতক এক হাজার শিশুর মধ্যে ১৪৯ জন মারা যেত, এখন তা কমে এসে ৫৪-তে দাঁড়িয়েছে। সহস্রাব্দ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্বকালে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের মধ্যে সব লক্ষ্যমাত্রাই অর্জন করতে পারবে বলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেছেন ও বলেছেন যে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে বার্ষিক ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্য। অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে পেরেছে। সবার জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৯০ সালে যেখানে শতকরা ৬১ ভাগ শিশু স্কুলে যেত, তা ৯২ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। দারিদ্র্যের হার শতকরা ৬০ থেকে ৩৭ ভাগে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে শতকরা ১০০ ভাগ শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান নিশ্চিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে। ২০১৫ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হবে ও চাকরির ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগ নারীর প্রতিনিধিত্ব সিট সংরক্ষণ করা হবে। তিনি আরও ঘোষণা দিয়েছেন, শিশু ও মায়ের মৃত্যুর হার কমানো হবে, সব নাগরিককে পানি ও উন্নত জীবনের সব ব্যবস্থা দেওয়া হবে। ধনী দেশগুলোর ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে তাদের জাতীয় সার্বিক আয়ের শতকরা ০.৭ ভাগ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ—নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ—এই প্রতিশ্রুত সাহায্য দিয়েছে। বাকি শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাহায্যের পরিমাণ ও হার ছিল নগণ্য। যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় আয়ের মাত্র ০.২ ভাগ হারে সাহায্য দিয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীও উদ্যাপিত হবে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি যে গতিতে উন্নয়ন অর্জন করে চলেছে, তাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত করা অসম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের উদীয়মান ৩০টি শিল্পোন্নত দেশের একটি হিসেবে আবির্ভূত হবে। বাংলাদেশকে এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করতে এবং অর্থনৈতিক অর্জন ধরে রাখতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো ২০১১-১৫ অনুসারে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। শিল্পনীতি ২০১০-এ ২০১৩ সালে আট শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জন করবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
আমরা যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত হার অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতের ওপর জোর দিতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে মোট ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে তিন লাখ ছয় হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে মোট ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলে বিনিয়োগের ঘাটতি পড়বে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত ১০ বছরের মতো বিনিয়োগ-গতি ধরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। আগামী পাঁচ বছরে নির্ধারিত মাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে প্রতিবছর গড়ে ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ হারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগের হার এখন মোট জিডিপির মাত্র ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সরকার-নির্ধারিত আগামী পাঁচ বছরে বিনিয়োগের হার ৩২ শতাংশে উন্নয়নের লক্ষ্যে জিডিপির মোট পরিমাণ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, তার বেশির ভাগই আসবে বেসরকারি খাত থেকে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও তা হয়েছে মূলত অনুৎপাদনশীল খাতে। বিনিয়োগ যদি অনুৎপাদনশীল খাতে হয়, সেটা সরকারি বা বেসরকারি যে সেক্টরেই হোক, তা দেশের অর্থনীতির জন্য তেমন মঙ্গল বয়ে আনবে না।
১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের দেশের রপ্তানি ছিল ৩৫ কোটি ডলারেরও নিচে। আজ গত চার দশকে তা ৩০ গুণ বেড়েছে। জাতীয় আয় বেড়েছে, তাই মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। আবার একই সঙ্গে বেড়েছে বৈষম্য। দেশের ওপরের দিকের মাত্র পাঁচ শতাংশ ধনী জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ ভোগ করে। সবচেয়ে গরিব পাঁচ শতাংশ মানুষ জাতীয় আয়ের মাত্র ০.৬৭ শতাংশ ভোগ করে। দৈনিক দুই ডলার আয় করা মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ। আর দৈনিক এক ডলারের নিচে আয় করে অর্ধেক জনসমষ্টি। মাথাপিছু আয়, মোট জাতীয় আয় ইত্যাদি সংখ্যাতত্ত্ব বৈষম্যপূর্ণ সমাজের আসল খবর দেবে না। উন্নয়নের ১ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলকরণ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সাধারণ ক্ষুধার নিবৃত্তি না ঘটলে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং নিরাময়যোগ্য রোগব্যাধির হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাবে না।
বাম চিন্তাবিদেরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও মাতৃস্বাস্থ্য আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বব্যবস্থাকে একটি মানবিক চেহারা এবং অসহনীয় দারিদ্র্যকে একটা সহনীয় রূপ দেওয়ার জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়নের নামে দয়ার্দ্র উপচিকীর্ষার কথা বলেছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর বহ্বাড়ম্বর লঘুক্রিয়ায় পর্যবসিত হবে। সহস্রাব্দের উন্নয়নের ধুমধাম ধামাকা চিঁ-চিঁ রবে অবশিত হবে।
মহাজনদের পরিকল্পনায় মহাজন-রাষ্ট্ররা সাহায্যের হাত তেমন না বাড়ালেও উন্নয়নশীল দেশের লোকে আশায়-আশায় স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই আশার চিত্র পরস্ফুিট করতে শিল্পী সন্তু সাহা যে ১০টি পোস্টার নির্মাণ করেছেন, আমি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে তা উদ্বোধন করি। ঢাকার জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও হোপ মাল্টিমিডিয়ার সম্মিলিত উদ্যোগে ওই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা। সাবেক প্রধান বিচারপতি।
0 Responses to "সহস্রাব্দের উন্নয়ন ধুমধাম ধামাকা"
Post a Comment